About Solar Power
সৌর বিদ্যুৎ
সৌর কোষ
সৌর কোষ হচ্ছে একটি ফটোভোলটেইক ডিজাইন যা
বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয় যদি এটিকে সূর্যালোকে উদ্দীপ্ত করা হয়। সৌর কোষ ফটোভোলটেইক
পদ্ধতির মাধ্যমে শক্তির রূপান্তর নির্দেশ করে। এটি আরও কিছু ইলেকট্রনিক সামগ্রীতে পরিলক্ষিত
হয় যেমন- ইনট্রিগ্রেটেড সার্কিট। সৌর কোষে কোনো বিদ্যুৎ সঞ্চিত থাকে না।
সূর্য কোষের মৌলিক অংশ একটি
পরমানু যার সবচেয়ে ভিতরের ব্যান্ডের ইলেকট্রনগুলোকে বলা হয় ভ্যালেন্স ইলেকট্রন। ভ্যালেন্স
ইলেকট্রন দ্বারা যে ব্যান্ড আবদ্ধ থাকে তাকে বলা হয় ব্যালেন্স ব্যান্ড। সবচেয়ে বাইরের
ব্যান্ডকে বলে কনডাকশন ব্যান্ড। কনডাকশন ব্যান্ডের শক্তি ভ্যালেন্স ব্যান্ডের চেয়ে
বেশি। এই ব্যান্ডের ভিতর ইলেকট্রনগুলো মুক্তভাবে চলাচাল করতে পারে। কনডাকশন ব্যান্ড
এবং ভ্যালেন্স ব্যান্ডের ফাঁকা জায়গাকে বলা হয় ফরবিডেন জোন যেখানে ইলেকট্রন অবস্থান
করতে পারে না।
বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া
সূর্য শক্তি এমন এক শক্তি
যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে সরাসরি সূর্যরশ্মি ব্যবহার করে। এই শক্তি উৎপন্ন হয় সোলার
ফটোভোলটেইক (Pv) পদ্ধতির মাধ্যমে। যখন সূর্যরশ্মি সোলার কোষের উপর তীব্রভাবে পড়ে, তখন এটি
ইলেকট্রন ছেড়ে দেয় সোলার কোষের p-n সংযোগ থেকে। যা অন্য ইলেকট্রনগুলোকে ধাক্কা দিতে থাকে আড়াআড়িভাবে একটি
প্রচ্ছন্ন বাধা বা ইলেকট্রিক ক্ষেত্র তৈরর জন্য। এই ইলেকট্রনগুলো তখন পুরো একটি
বাইরের সার্কিট ঘুরে আসে আগের অবস্থানে এবং এই কোষের প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ শক্তি
উৎপন্ন হয়।
ফটোভোলটেইক পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন
ফটোভোলকেটইক প্রক্রিয়া এমন একটি মৌলিক প্রকিয়া
যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে ফটোভোলকেটই (Pv) কোষের মাধ্যমে, সরাসরি সূর্যের আলো থেকে। সূর্যরশ্মি ফোটন নামক বিদ্যুৎ বিভিন্ন মাত্রার শক্তির প্যাকেট দ্বারা
আবদ্ধ থাকে। এই ফোটনগুলো বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘের হয়ে থাকে। যখন ফোটনগুলো ফটোভোলটেইক
(Pv) কোষকে
তীক্ষ্মভাবে আঘাত করে, এগুলো তখন প্রতিফলিত, শোধিত অথবা p-n সংযোগ
দিয়ে পরিবাহিত হতে পারে। শোষিত ফোটনগুলো p-n সংযোগের ভিতর বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের
জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো নিম্নরূপ:- সোলার প্যানেল
- ব্যাটারি
- চার্জ কন্ট্রোলার
- বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় তার এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ
সোলার প্যানেল
সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান
উপকরণ হলো সোলার প্যানেল যা অনেকগুলো সৌর কোষের সমন্বয়ে গঠিত। সৌর কোষ সিলিকন পদার্থের
তৈরি। সৌর কোষগুলোর মডিউল এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয় যেন সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে বিদ্যুৎ
উৎপন্ন হয়।
সোলার প্যানেল
সোলার সিস্টেমের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা
সাধারণ অর্থে সিস্টেমের সোলার প্যানেলের আকার, সংখ্যা, কর্মক্ষমতা ইত্যাদির উপর
নির্ভর করে। বাসগৃহে সাধারণত যে সোলার প্যানেল আমরা ব্যবহার করি
তার প্রতিটিতে ৪০ টি সৌর কোষ থাকে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের
পরিমান ও তদনুসারে সোলার প্যানেলের সংখ্যা নির্ণয়পূর্বক দালানের
ছাদে বা রৌদ্র প্রাপ্তির জন্য কোন সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করে সৌর বিদ্যুৎ তৈরি
করা হয়। পৃথিবীজুড়ে সৌর শক্তির ব্যবহার নিয়ে যেসব বৈজ্ঞানিক গবেষণা চলছে তা মূলত
এই সৌর কোষ তথা সোলার প্যানেলের কর্মক্ষমতা কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে। এখন
পর্যন্ত বানিজ্যিকভাবে আমরা যে প্যানেলগুলো ব্যবহার করছি তার কর্মক্ষমতা মাত্র
শতকরা ১২ থেকে ১৮ ভাগ। একটি চমৎকার রৌদ্রজ্জ্বল দিনে বিজ্ঞানীরা
একটি সোলার প্যানেলের কর্মক্ষমতা শতকরা ৪৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে
সক্ষম হয়েছেন। তবে এসবই হয়েছে গবেষণাগারে, যা একনও সাধারণের ব্যবহার উপযোগী করা
সম্ভব হয়নি। আশা করা যেতে পারে, অতি শীঘ্রই শতকরা অন্তত ২৫ ভাগ কর্মক্ষমতা সম্পন্ন
সোলার প্যানেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।
সোলার প্যানেল স্থাপনের
জন্য উপযুক্ত স্থান হলো যে কোন খোলা জায়গা যেমন- দালানের ছাদ, খোলা ময়দান, টিনের বা
শনের ঘরের চালা ইত্যাদি। এমনকি দালানের সাউথ এলিভেশন বরাবর প্যানেল স্থাপন করা যেতে
পারে, আবার প্যানেলের সাহায্যে ঘরের চালাও তৈরি করা যেতে পারে। তবে আসল কথা হলো প্যানেলের
অবস্থান এমন হতে হবে যেন তা দিনের বেলা অধিকাংশ সময় সর্বোচ্চ সূর্যালোক থেকে বঞ্চিত
না হয়। সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে
দেওয়া গেল-
- দালানের ছাদে বা পানির ট্যাংকে সোলার প্যানেল স্থাপন করে বাসাবাড়ি বৈদ্যুতিক আলোয় আলোকিত করা যায়।
- আমাদের দেশের বড় শহরগুলোতে (যেমন- ঢাকা, চট্টগ্রাম) যেসব শপিংমল বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দক্ষিণমূখী, সেগুলোর বাইরে সাধারণ কাচের পরিবর্তে সোলার প্যানেল স্থাপন করে উক্ত মলের বিদ্যুৎ চাহিদার উল্লেখযোগ্য অংশ মিটানো যেতে পারে।
- ফিলিং স্টেশন, টোল স্টেশন, হাইওয়ে প্রভৃতি খোলা জায়গায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে ঐসব স্থাপনার বিদ্যুৎ চাহিদা মিটানো যায়।
- চা বাগানের সেডট্রি, স্ট্রিট লাইট পোস্ট ইত্যাদির সাথে সোলার প্যানেল স্থাপন করে বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
শপিংমল বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেল
স্থাপন
ব্যাটারি
সোলার প্যানেল সিস্টেম
এর অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে ব্যাটারি। ব্যাটারির কাজ হলো দিনের
আলোয় উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎ জমা করে প্রয়োজনমত ব্যবহারের জন্য তা সরবরাহ করা। সৌর বিদ্যুৎ
উৎপাদন ও ব্যবহার প্রক্রিয়ো দুই ধরণের।
(ক) অন-গ্রিড
(খ) অফ-গ্রিড
অনগ্রিড সোলার সিস্টেম
অনগ্রিড পদ্ধতিতে ব্যাটারি
ব্যবহার করা হয় না, কারণ এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ জমা করার প্রয়োজন পড়ে না। এই প্রক্রিয়ায়
সোলার প্যানেলে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ যেমন- বৈদ্যুতিক বাতি,
পাখা প্রভৃতিতে ব্যবহার করা হয়। তবে এটি রাতের বেলা বা মেঘ-বাদল দিনে ব্যবহার করা যায়
না। অর্থাৎ অনগ্রিড পদ্ধতিতে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য একটি রৌদ্রময় দিনের প্রয়োজন।
এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে একই সাথে চলতে থাকে।
অফগ্রিড সোলার সিস্টেম
খ. অফগ্রিড পদ্ধতি:
আমরা সৌর বিদ্যুৎ এর যে পদ্ধতি
ব্যবহার করি তা হলো অফগ্রিড পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সূর্যের আলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ
সঞ্চয় করে রাখা হয় যা প্রয়োজনে রাতের বেলা বা বৃষ্টির দিনে ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ
সঞ্চয়ের জন্য আমরা ব্যাটারি ব্যবহার করে থাকি। সোলার প্যানেলে উৎপাদিত বিদ্যুৎ রিচার্জের
মাধ্যমে ব্যাটারিতে জমা হয় এবং এই জমাকৃত বিদ্যুৎ তাৎক্ষণিকভাবে বা পরবর্তীতে প্রয়োজনমত
ব্যবহার করা যায়। ঠিক যেভাবে লোডশেডিং এর সময় আমরা অতি পরিচিত আইপিএস ব্যবহার করে থাকি।
তবে আইপিএস-এর ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ব্যাটারি চার্জ
করা হয় এবং ব্যাটারি চার্জের জন্য অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল
গুনতে হয়। কিন্তু সোলার প্যানেল ব্যবহার করে আমরা অতি সহজেই সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে ব্যাটারি
চার্জ করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের হাত থেকে রেহাই পেতে পারি।
সোলার প্যানেলে ব্যবহৃত
ব্যাটারি
চার্জ কন্ট্রোলার:
চার্জ
কন্ট্রোলারের কাজ হলো ব্যাটারিকে মাত্রাতিরিক্ত চার্জ থেকে রক্ষা করা।
মাত্রাতিরিক্ত চার্জের কারণে ব্যাটারি যাতে নষ্ট হয়ে না যায় সেজন্য এটি সেফগার্ড
হিসাবে কাজ করে।
সোলার প্যানেল সিস্টেমের বিভিন্ন যন্ত্রাংশসমূহকে
বৈদ্যুতিক তারের সাহায্যে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করা হয়। সোলার প্যানেল, প্যানেল
স্ট্যান্ড, চার্জ কন্ট্রোলার, ব্যাটারি, ইনর্ভাটার, ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার,
কানেকটর প্রভৃতি সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সোলার এনার্জি সিস্টেম তৈরি করা হয়।
একটি পূর্ণাঙ্গ সোলার এনার্জি সিস্টেম
কেন আইপিএস-এর পরিবর্তে সোলার প্যানেল?
সোলার প্যানেল আমাদের দেশে ইদানীং যথেষ্ট
সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ গ্রামীণ শক্তি, হাইড্রেন বাংলাদেশ এবং আরও অনেক বেসরকারি
সংস্থা সোলার প্যানেল সরবরাহ, স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে থাকে। সোলার প্যানেল
স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ও খুব বেশি নয়। আইপিএস-এর ক্ষেত্রে
বিদ্যমান বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ব্যাটারি চার্জ করা হয় এবং ব্যাটারি
চার্জের জন্য অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল গুনতে হয়। কিন্তু সোলার প্যানেল
ব্যবহার করে আমরা অতি সহজেই সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে ব্যাটারি চার্জ করে
অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের হাত থেকে রেহাই পেতে পারি। বিদ্যুতের
ব্যবহার অনুযায়ী নিম্নরূপে সোলার প্যানেলের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়।
ধরি, একটি বাসগৃহে ৩ টি ২৫ ওয়াট ক্ষমতার এনার্জি সেভিং বাল্ব ও ৮০ ওয়াট ক্ষমতার
২টি সিলিং ফ্যান চালানোর জন্য সোলার প্যানেল স্থাপন করতে হবে। একটি
সোলার প্যানেলের (সাইজ-৩৭"×১৯.৫"×২")বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ ওয়াট। বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ = ৩টি ২৫ ওয়াট বাল্ব + ২টি ৮০ ওয়াট
ফ্যান = ৩
×২৫+২×৮০ = ৭৫+১৬০= ২৩৫ ওয়াট।
সুতরাং প্যানেল সংখ্যা = ২৩৫ ÷ ৫০
= ৪.৭০ অর্থাৎ ৫টি প্যানেল স্থাপন
করতে হবে। এজন্য ১২ ভোল্ট রেটিং এর ব্যাটারি এক বা একাধিক স্থাপন
করা যেতে পারে। ব্যাটারি সংখ্যা যত বাড়ানো যায়, সোলার প্যানেল সিস্টেম এর ব্যাকআপ টাইপ
তত বেশি হয়।
সোলার প্যানেল ও আইপিএস-এর
মূল পার্থক্য হলো সোলার প্যানেল সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে ব্যাটারিতে জমা করে; পক্ষান্তরে
আইপিএস বিদ্যমান বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিদ্যুৎ দিয়ে ব্যাটারি রিচার্জ করে।
অর্থাৎ আইপিএস ব্যবহার করলে ব্যাটারি রিচার্জ এর জন্য অতিরিক্ত
বিদ্যুৎ বিল গুনতে হয়। বিদ্যুৎ লাইন থাক বা না থাক, যে কোন রৌদ্রজ্জ্বল স্থানে
সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুতের সুবিধা গ্রহণ করা যায়। কিন্তু কেবলমাত্র
বিদ্যমান বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় লোড শেডিংয়ের সময় আইপিএস কাজে লাগে। এছাড়া আইপিএস-এর
ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ সোলার প্যানেল সিস্টেমের ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণের চেয়ে
জটিল। সর্বোপরি সোলার প্যানেল সিস্টেম একটি ব্যয়সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব শক্তি
ব্যবস্থা।
No comments